কর্পোরেট জবাবদিহিতা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচারের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২ এএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:৩২ এএম

পরিবেশ সুরক্ষায় ঐক্যবদ্ধতার পুনর্কল্পনার ওপর জোর দিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পরিবেশগত অধিকার রক্ষা করা সরকার, ব্যবসা সংগঠনসমূহ, নাগরিক সমাজ এবং সকল সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ উপদেষ্টা ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রের ‘এশিয়ায় কর্পোরেট টেকসই এবং পরিবেশগত অধিকার’ সম্মেলনের উদ্বোধনী (পূর্ণাঙ্গ) অনুষ্ঠানে ঢাকায় তার বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি কথা বলেন। এ বছর সম্মেলনটির প্রতিপাদ্য হল ‘একটি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশের অধিকার: কর্পোরেট সম্পৃক্ততার পুননির্ধারণ’।
শক্তিশালী আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, কিছু দেশ বিচারিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে পরিবেশগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও, অনেক দেশে এখনও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট সাংবিধানিক বিধানের অভাব রয়েছে। রিজওয়ানা বলেন, এটি পরিবর্তন করতে হবে। অতিরিক্ত মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি জীববৈচিত্র্যকে অবহেলিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। সতর্কতামূলক নীতি, দূষণকারীর অর্থ প্রদানের নীতি এবং যথাযথ পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়নের মূলে নিহিত আইনি কাঠামো তৈরির আহ্বান জানান তিনি। পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণে দ্বৈত মানদ-ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানির ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়, কিন্ত উন্নত দেশগুলো থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রিত হয় শিথিল মান দ্বারা। জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিপজ্জনক বর্জ্য স্থানান্তর এবং বায়ু দূষণের মানদ-ের বৈষম্য তুলে ধরে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘একজন পশ্চিমা নাগরিকের ফুসফুস বাংলাদেশের নাগরিকদের ফুসফুস থেকে আলাদা নয়।’ তার বক্তব্যে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) উল্লেখ করে তিনি যুক্তি দেন যে, স্বতঃপ্রবৃত্ত এসআর নীতিসমূহ অপর্যাপ্ত। তিনি আরো বলেন, প্রকৃত কর্পোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দায়িত্ব এড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ উপদেষ্টা রাষ্ট্রসমূহকে কার্যকর আইনে মূল পরিবেশগত নীতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি পরিবেশগত তথ্যাবলি জনসাধারণের আয়ত্ত্বাধীন করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বলেন যে, কিছু দেশে তথ্য অধিকার আইন থাকলেও অনেকে কর্পোরেট পরিবেশগত তথ্য বাদ দেয়, যা মানুষের ব্যবসায়িক প্রভাব মূল্যায়ন করার ক্ষমতা সীমিত করে দেয়। বিধিনিষেধের অধীনে সক্রিয়তা দমন করার পরিবর্তে তিনি রাষ্ট্র প্রধান ও সরকারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনসাধারণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষাকারীদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সফল আইনি মডেল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশগত ট্রাইব্যুনালগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। উপদেষ্টা বাংলাদেশে, সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার ফলে পরিবেশগত আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কর্পোরেশনসমূহের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য উৎসর্গকৃত ক্ষতিপূরণ তহবিলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান ক্ষতি করে তা নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দিয়ে কর্পোরেট দায়িত্ব শুরু করা উচিত। কর্পোরেট ‘গ্রিনওয়াশিং’ এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি সরকার, ব্যবসা এবং সম্প্রদায়কে ‘টেকসই সার্টিফিকেশন’ বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। পরিবেশগত সক্রিয়তাকে দুর্বল করে এমন ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি মিডিয়ায় দেয়া বর্ণনার ওপর সম্মিলিত নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দেন। দায়িত্বশীল সমাজ গঠনে পরিবেশগত শিক্ষার ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, ‘পরিবেশগত সচেতনতা নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা কর্পোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার বা কর্পোরেশন কারোরই প্রকৃতি ধ্বংস করার অধিকার নেই। রিজওয়ানা বলেন, যদি আপনি একটি সমুদ্র, একটি বন বা একটি পাহাড় তৈরি করতে না পারেন, তবে আপনার সেগুলো ধ্বংস করার কোনো অধিকার নেই।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ঈদের ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি সেবা
নারী সাংবাদিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: এক জনের দোষ স্বীকার, অপরজন কারাগারে
পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেই ইটভাটা অবৈধ
অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দ- থেকে খালাস লুৎফুজ্জামান বাবর
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-ইনুসহ সাত জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে
আরও
X

আরও পড়ুন

ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেয়া ‘সম্ভবত অসাংবিধানিক’

ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেয়া ‘সম্ভবত অসাংবিধানিক’

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট কোন দেশের?

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট কোন দেশের?

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার

বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

ঈদের ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি সেবা

ঈদের ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি সেবা

নারী সাংবাদিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: এক জনের দোষ স্বীকার, অপরজন কারাগারে

নারী সাংবাদিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: এক জনের দোষ স্বীকার, অপরজন কারাগারে

পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেই ইটভাটা অবৈধ

পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেই ইটভাটা অবৈধ

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দ- থেকে খালাস লুৎফুজ্জামান বাবর

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দ- থেকে খালাস লুৎফুজ্জামান বাবর

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-ইনুসহ সাত জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-ইনুসহ সাত জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

রাজধানির বিলাসি ব্র্যান্ডের আউটলেটে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের

রাজধানির বিলাসি ব্র্যান্ডের আউটলেটে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের

ধামরাইয়ে ব্রিজের নিচ থেকে মাটি কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

ধামরাইয়ে ব্রিজের নিচ থেকে মাটি কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক, প্রতিমন্ত্রী এনাম ফের রিমান্ডে

রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক, প্রতিমন্ত্রী এনাম ফের রিমান্ডে

হায়রানিমূলক ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল

হায়রানিমূলক ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল

ইফায় ফ্যাসিস্টের সহচরদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা

ইফায় ফ্যাসিস্টের সহচরদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা

নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে মহিলা পরিষদ

নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে মহিলা পরিষদ

পাঁচ পণ্য নিয়ে ঢাকায় ‘জনতার বাজার’ উদ্বোধন

পাঁচ পণ্য নিয়ে ঢাকায় ‘জনতার বাজার’ উদ্বোধন

ড. ইউনূসের আপিলের রায় ২৩ এপ্রিল

ড. ইউনূসের আপিলের রায় ২৩ এপ্রিল

ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপি ১৪ নির্দেশনা

ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপি ১৪ নির্দেশনা

জাগপা’র নিবন্ধন ফেরত দিতে ইসিকে নির্দেশ

জাগপা’র নিবন্ধন ফেরত দিতে ইসিকে নির্দেশ